বিরাট কোহলির রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরিতে এক যুগ পর বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনালে উঠলো ভারত। মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়েতে প্রথম সেমিফাইনালে ভারত ৭০ রানে হারিয়েছে নিউজিল্যান্ডকে। আগে ব্যাট করতে নেমে কোহলি ও শ্রেয়াস আইয়ারের সেঞ্চুরিতে ভারত ৪ উইকেটে ৩৯৭ রান তোলে। শচীন টেন্ডুলকারকে টপকে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের এক আসরে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহের রেকর্ডও গড়েন কোহলি। জবাবে ব্যাট করতে নেমে নিউজিল্যান্ড ৪৮.৫ ওভারে ৩২৭ রানে অলআউট হয়ে যায়।

৩৯৮ রানের লক্ষ্য এর আগে বিশ্বকাপের ইতিহাসে কেউ তাড়া করে জিততে পারেনি। ব্ল্যাকক্যাপসদের সামনে ইতিহাস রচনার হাতছানি ছিল। সেই লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই মোহাম্মদ শামির বোলিং তোপে দুই ওপেনারকে হারায় নিউজিল্যান্ড। ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেট হারিয়ে ৪৬ রান তুলে কিউইরা। তৃতীয় উইকেট জুটিতে দলের হাল ধরেন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ও ড্যারেল মিচেল।

ভারতীয় বোলারদের উপর মিডেল ওভারে রীতিমত চড়াও হন দুই কিউই টপ অর্ডার ব্যাটার। ৩৯ রানে দুই উইকেট হারানো দলকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলে ঝড়ো ১৮১ রানের জুটি গড়ে নিউজিল্যান্ড শিবিরে আশার আলো দেখান মিচেল ও উইলিয়ামসন। স্বাগতিক বোলাররা যখন চাপে ছিলেন ঠিক সেই মুহূর্তে দলের ত্রাণকর্তা হয়ে হাজির হন পেসার মোহাম্মদ শামি।

ইনিংসের ৩৩তম ওভারে কেন উইলিয়ামসনকে ফিরিয়ে সেই ওভারে জোড়া আঘাত হানেন শামি। আর তাতেই কিউইদের শেষ আশাটাও এক প্রকার ফুরিয়ে যায়। তবে পঞ্চম উইকেট জুটিতে গ্লেন ফিলিপস ও মিচেল ৭৫ রানের জুটি গড়ে আবারো কিছুটা আশা জাগালেও শেষ পর্যন্ত তা আর সম্ভব হয় নি। ভারতীয় বোলারদের তোপে ৩২৭ রানে থামে নিউজিল্যান্ড। ফলে ৭০ রানের জয়ে বিশ্বকাপে টানা দশ ম্যাচ জিতে ফাইনাল নিশ্চিত করল রোহিত শর্মার দল। ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ ৭টি উইকেট নেন শামি। কিউইদের ১১৯ বলে ১৩৪ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন মিচেল।

এর আগে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা। বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে ভারতকে দারুণ শুরু এনে দিয়ে নিজের সিদ্ধান্তকে যথার্থও প্রমাণ করেন তিনি। শুভমান গিলকে নিয়ে উদ্বোধনী জুটিতে ৮.২ ওভারে ৭১ রান যোগ করেন তিনি। কিন্তু টিম সাউদির বলে কেন উইলিয়ামসনকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন রোহিত। ৪টি করে ছক্কা এবং চারে ২৯ বলে ৪৭ রান করেন তিনি।

রোহিত ফেরার পরও রানের চাকা সচল রাখেন শুভমান গিল ও বিরাট কোহলি। তারা দুজনে ৮৬ বলে ৯৩ রান যোগ করেন। শতরানের পথেই হাঁটছিলেন ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিংয়ে নাম্বার ওয়ান ব্যাটার গিল। কিন্তু পায়ের পেশিতে টান লাগায় তিন অংকের স্কোর ছোঁয়ার আর সুযোগ পাননি তিনি। শেষদিকে ব্যাটিংয়ে নামলেও ৩টি ছক্কা এবং ৮টি চারে ৬৬ বলে ৮০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন এই ব্যাটার।

চোটের জন্য শুভমান না পারলেও কোহলি ঠিক ছুঁয়েছেন তিন অংকের জাদুকরী স্কোর। ১০৬ বলে ৮টি চার এবং ১টি ছক্কায় সেঞ্চুরি পূরণ করেন তিনি। ওয়ানডেতে মোট সেঞ্চুরিতে তিনি পেছনে ফেললেন কিংবদন্তী টেন্ডুলকারকে। এই সংস্করণে সেঞ্চুরির হাফসেঞ্চুরি কীর্তিটা শুধু কোহলিরই। শেষ পর্যন্ত ১১৩ বলে ৯টি চার এবং ২ ছক্কায় ১১৭ রান করে টিম সাউদির বলে ডেভন কনওয়ের তালুবন্দী হয়েছেন তিনি।

এর আগে বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে শ্রেয়াস আইয়ারকে নিয়ে ১২৮ বলে ১৬৩ রানের বড় একটা জুটি গড়ে ভারতকে বড় স্কোর গড়ায় অগ্রনী ভূমিকা রাখেন কোহলি। আগ্রাসী ব্যাটিং করতে থাকা আইয়ারও সেঞ্চুরি পূরণ করেছেন ৬৭ বলে। ৮টি ছক্কা এবং ৪টি চারে খেলা তার ৭০ বলে ১০৫ রানের বিস্ফোরক ইনিংস এবং লোকেশ রাহুলের ২০ বলে ৩৯* রানের ক্যামিওতে ভারতের স্কোর দাঁড়ায় ৩৯৮ রানে।

নিউজিল্যান্ডের হয়ে বল হাতে ৩টি উইকেট নিয়েছেন টিম সাউদি। আয়ারের উইকেটটি নিয়েছেন ট্রেন্ট বোল্ট।

এরপর রান তাড়ায় দেখেশুনে ব্যাট করে প্রথম পাঁচ ওভারে বিনা উইকেটে ৩০ রান তুলে নিউজিল্যান্ড। তবে বোলিংয়ে এসেই ব্রেক থ্রু এনে দেন মোহাম্মদ শামি। ৯ রানের মধ্যেই ২ উইকেট শিকার করেন ডানহাতি এই পেসার। তবে কেন উইলিয়ামসন ও ড্যারেল মিচেলের ব্যাটে শুরুর ধাক্কা সামলে জয়ের আশাও হয়তো দেখছিল কিউইরা। তৃতীয় উইকেটে তারা দুজনে ১৮১ রানের জুটি গড়েন।

কিন্তু ৬৯ রান করা উইলিয়ামসনকে ফিরিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে ব্রেক থ্রু এনে দেন শামি। এরপর একই ওভারে টম লাথামকেও শূন্য হাতে ফেরালে আবার চাপে পড়ে কিউইরা। ২২০ রানে চতুর্থ উইকেট হারানোর পর গ্লেন ফিলিপসের সঙ্গে একটা হাফসেঞ্চুরির জুটি গড়েন সেঞ্চুরিয়ান মিচেল। ৪১ রান করে বুমরাহর বলে রবীন্দ্র জাদেজাকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ফিলিপস।

অন্য প্রান্তে তাঁর সাবলিল ব্যাটিং করলেও দলের হার এড়াতে পারেননি মিচেল। বিফলে গেছে তার ১১৯ বলে ১৩৪ রানের ইনিংসটি। শেষদিকে মোহাম্মদ শামির আগ্রাসী বোলিংয়ে ৯ বল বাকি থাকতেই ৩২৭ রানে অলআউট হয়ে যায় নিউজিল্যান্ড। আগামীকাল অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার জয়ী দলের বিপক্ষে আগামী ১৯ নভেম্বর আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে ফাইনালে মাঠে নামবে রোহিত-কোহলিরা।